জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাস আগস্টকে ‘জাতীয় বিপ্লবের মাস’ আখ্যা দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে তিনি বলেছেন, “আগস্ট আমাদের শোকের নয়, এটা সুখের এবং শান্তির মাস।”
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউনূস আওয়ামী লীগবিরোধী বেশ কিছু দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুপুরের দিকে যায় বিএনপি, সন্ধ্যায় বেশ কিছু দলের নেতাদের পাশাপাশি যান নুরও।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন করে আলোচনায় আসা নূর এক প্রশ্নে বলেন, “অগাস্ট মাসকে অক্টোবর বিপ্লবের মত ‘অগাস্ট বিপ্লব’ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি দিয়ে এটা পালন করার উদ্যোগ নিতে হবে।”
আওয়ামী লীগ ১৫ থেকে ২১ অগাস্টের মধ্যে ঢাকায় একটা ‘তাণ্ডব’ চালাবার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে দাবি করে গণঅধিকার পরিষদের নেতা বলেন, “সেই পরিকল্পনা সরকার যেমন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মোকাবেলা করবে, একই সঙ্গে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাদের নিয়ে দুয়েকদিনের মধ্যে জনতার মঞ্চ গঠন করে এই ‘গণহত্যায়’ জড়িত শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথে আমরা অবস্থান নেব।”
আরেক প্রশ্নে নাম উল্লেখ না করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান নূর। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে বহুমত, বহুপথ থাকবে। কিন্তু পৃথিবীর বহু দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার, তাদের নিষিদ্ধ করার নজির আছে। জার্মানিতে নাৎসীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ইতালিতে মুসোলিনির পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।”
সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়ে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা অনুরোধ করেছি সংখ্যালঘুদের এসব হামলা মামলার বিষয়ে তদন্ত করার জন্য একজন সংখ্যালঘু বিচারপতি বা বিশেষ ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করে এই ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার। উপদেষ্টাদেরকেও আমরা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে মতবিনিময় করার আহ্বান জানিয়েছি।”
নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না- এই প্রশ্নে নুর বলেন, “এই মুহূর্তে উপদেষ্টাদের বিব্রত করার জন্য বা চাপে রাখার জন্য সময় বা টাইম ফ্রেম নিয়ে কোনো আলোচনা করি নাই।
“আমরা এটা নিয়ে অস্থির নই, অন্যদেরকে আমরা ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাব। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতালোভী না, তিনি ক্ষমতায় থাকবেন না। ওয়ান ইলেভেনেও তাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল, তিনি নেন নাই। আজকে আমাদের অনুরোধে নিয়েছেন।”
যৌক্তিক সময়ের বেশি নয়: এবি পার্টি
জামায়াতে ইসলামী থেকে বের হয়ে গঠন করা দল এবি পার্টিও দেখা করে ড. ইউনূসের সঙ্গে। দলটির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, “(অন্তর্বর্তী সরকার) যদি যৌক্তিক সময়ের বেশি থাকতে চায়, তাহলে জনপ্রিয়তা হারাবে, গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। সেই জিনিসটা আমরা তাদের মনে করিয়ে দিয়েছি।“
বেশি সময় নিলে রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে বাধ্য হবে- এই কথাটিও জানিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি।
তিনি বলেন, “ছাত্র জনতার যে প্রত্যাশা আমরা সেটাকে হারিয়ে যেতে দিতে চাই না, আমরা যদি ব্যর্থ হয়ে যাই, আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে আমাদের পরিণতি আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। কোনোভাবেই আমাদের ব্যর্থ হওয়া চলবে না।”
নূরের মত মঞ্জুও ১৫ অগাস্টের সরকারি ছুটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “‘স্বৈরাচারি’ সরকারের সব কিছু যেহেতু বাতিল, পরিপূর্ণ বাংলাদেশকে নতুনভাবে তৈরি করতে হবে। দিবস বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক আলোচনা না এটা গণপ্রজাতন্ত্রকে সেই আলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”