৫ই আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর থেকে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন লাপাত্তা। ফলে সভাপতিবিহীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পার করছে অস্থির এক সময়। যদিও সম্প্রতি পদত্যাগে সম্মত হয়েছেন পাপন। কিন্তু পাপন ছাড়া আরও অনেক প্রভাবশালী পরিচালকের এখনো খোঁজ মেলেনি। এ কারণে নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কি হবে সেটা নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর দিন কয়েক আগেই লন্ডনে পাড়ি জমান পাপন। সেখান থেকেই বিসিবি’র এক পরিচালককে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে সেটি করতে গেলে বোর্ড সভা ডাকতে হবে বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসানকেই। সেটা তিনি দেশের বাইরে থেকেও করতে পারবেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সভা ডেকে সেখানে সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব সভাপতি তার অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো পরিচালকের ওপর ন্যাস্ত করতে পারেন। অথবা সভাপতির অনুপস্থিতিতে সভায় উপস্থিতদের কারও প্রস্তাবে যেকোনো একজন পরিচালক সভাপতিত্ব করতে পারেন।
একটি সূত্র জানায়, বিসিবি সভাপতি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র পাঠালে এই সভা ডাকা হবে। সরকার পতনের পরদিন থেকেই বিসিবিতে চলছে মিটিং, শোডাউন। নানা ক্রীড়া সংগঠকরা বর্তমান বোর্ড পরিচালকদের পদত্যাগসহ নানা দাবি তুলছেন। ভবনের ভেতরের পরিবেশ গুমোট। যেহেতু সভাপতিসহ একাধিক পরিচালক বিসিবিতে আসছে না, তাদের কোনো খোঁজও নেই, সেক্ষেত্রে রদবদল এখন আবশ্যিক। বিসিবি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরপর তিনটি সভায় কেউ অনুপস্থিত থাকে, তাহলে তার পদ এমনিই বাতিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে নিখোঁজ পরিচালকরা আর বিসিবিতে হাজির না হলে নতুন পরিচালকদের দায়িত্বে আনা যেতে পারে প্রক্রিয়া মেনে। এখন সেই পরিবর্তনের ব্যাপ্তি কেমন হবে, সেটাই আলোচনার।
বোর্ডে পাপনের ডানহাত হিসেবে পরিচিতি ইসমাইল হায়দার মল্লিক আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান কানাডা পালিয়েছেন। বিসিবি’র নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারি দলের সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম নাদেলও নিখোঁজ। ফলে বোর্ডে বড়সড় পরিবর্তনই আনতে হবে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বর্তমান বোর্ডের একজন পরিচালক হয়তো থাকতে পারেন নতুন পরিচালনা পর্ষদে। কিংবা সর্বোচ্চ দুইজন।
সরকার চাইলেই বোর্ড ভেঙে দিতে পারবে না বা সব পরিচালক একযোগে পদত্যাগও করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে এই অভিযোগে আইসিসি’র নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হবে। আইসিসি’র বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, কোনো বোর্ডে পরিবর্তন আনতে হবে সেই বোর্ডের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। তখন নতুন সভাপতির সঙ্গে গোটা দশেক বোর্ড পরিচালককে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করা হতে পারে, যারা এক বছরের মধ্যে নির্বাচন দেবে। আর বিসিবি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের বিভিন্ন ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার মনোয়ন পেয়ে এবং সাবেক খেলোয়াড়, সার্ভিসেস, বিশ্ববিদ্যালয় কোটা থেকে পরিচালক পদে নির্বাচন করতে পারেন। এর বাইরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সরাসরি দু’জন পরিচালকের মনোনয়ন দেয়। এই কোটা থেকে এখনকার বোর্ডে আছেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও মোহাম্মদ জালাল ইউনুস। নির্বাচিত বোর্ড পরিচালকদের ভোটে পরে নির্বাচন করা হয় বোর্ড সভাপতি।
২০১২ সালে আ হ ম মোস্তফা কামাল সভাপতি পদ ছেড়ে দিলে সরকারের মনোনয়নে সভাপতি হন পাপন। পরের বছর নির্বাচনে জিতে তিনিই থেকে যান সভাপতি পদে। যদিও নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। পরের দু’টি নির্বাচনেও তার বিপক্ষে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াননি। যদিও ক্রিকেট পাড়ায় কান পাতলেই শোনা যায়, পাপন সবকিছু এমনভাবে সাজিয়ে রাখেন যে, কেউ তার বিপক্ষে দাঁড়ান না। এমনকি পরিচালকদের মধ্যে বেশির ভাগ একই লোক নির্বাচিত হন।