উত্তর পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে উঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছে অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্ররা। এতে তারা স্মারকলিপিতে ৮দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বরাবর দেয়া স্মারক লিপিতে উল্লেখ করা হয়, উত্তর পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন ১৬ বছর আগে ২০০৯ সালে যোগদান করেন। দীর্ঘ বছর ধরে বদলি ঠেকিয়ে গত সরকারের পুরোটা সময় থেকে বহাল তবিয়তে আছেন এ বিদ্যালয়ে। তিনি সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃত মৌলানা রশিদ আহমদের সন্তান। স্কুলটি ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬০ বছরে উনারা পিতা-পুত্র দুইজন মিলে ৪৬ বছর প্রধান শিক্ষকের পদে আছেন। বাড়ি স্কুল সংলগ্ন। তবে জেলা শহরে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন থাকলেও বর্তমানে পরিবারসহ চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে বিদ্যালয়ে আসেন এবং ছুটির পূর্বে চলে যায়। ফলে বিদ্যালয়ের পাঠদানে মারাত্মক ব্যাহত হয়ে আসছে। পড়াশোনার মান খারাপ হবার কারণে অনেক অভিভাবক নিজের সন্তানদের পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে হচ্ছে। ৫ম শ্রেণী উর্ত্তীণ একজন ছাত্র ভালো করে বাংলা রিডিং পড়তে পারে না। এরচেয়ে লজ্জাকর বিষয় আর কি হতে পারে। ফেল করা ছাত্রদের নাম্বার বেশি দেখিয়ে পাশ করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
তিনি এলাকায় জমির দালালি, খতিয়ান, কুটবুদ্ধি চালাচালি, সরকারী নানা অফিসের দৌড়াদৌড়ি নিয়ে উনি বেশি ব্যস্ত থাকেন। মানুষে মানুষে জমির বিরোধ সৃষ্টিতে উনার খ্যাতি রয়েছে। খারাপ চরিত্রের কারণে এলাকায় বেশ কবার অপমানিতও হয়েছেন তিনি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ছাড়পত্র, বিভিন্ন কাগজপত্রে সাক্ষর দেয়ার বিনিময়ে অর্থ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি গোপনে পছন্দের ব্যক্তিদের যাকে ই”ছা কমিটির সভাপতি, সদস্য করছেন। গোপনে আপন ছোট ভাইকে সভাপতি করেছেন। কোন বিষয়ে কেউ জানতে চাইলে, নানা ধরনের হুমকি ধামকি দেন। দেখাতেন গত সরকারের ক্ষমতার দাপট।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি মরহুম মকবুল আলী মুন্সীর নাম না দিয়ে আপন পিতা সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম মৌলভী রশিদ আহমদকে প্রতিষ্ঠাতা করেন তিনি। অথচ উনার পিতা বিদ্যালয়ে একখন্ড জমিও দান করেননি। বরং প্রধান শিক্ষকের পদ ব্যবহার করে নানা অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিতেন। ফলে এলাকার সকল শ্রেণীর মানুষ বর্তমান প্রধান শিক্ষক এর উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। এর প্রতিক্রিয়ায় এলাকাতে যে কোন সময় অপ্রিতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বিদ্যালয়ের নামীয় রেজিস্টি জমির তথ্য সম্পর্কে প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরেও এলাকার মানুষের কাছ থেকে আড়াল করে রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় যে জায়গায় পাঠদান শুরু হয়েছিল, সেই বিশাল জায়গা দখল করে বসবাস করছেন উনার পরিবার। প্রতিষ্ঠার সময়ের সেই জমিতে করার কথা ছিল নতুন স্কুল ভবন। বরাদ্দ ভবন নির্মাণের জন্য সেই জমিতে গর্ত পর্যন্ত খুড়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধান শিক্ষক উনার পিতা এলকার মানুষের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠাকালীন জমিতে নতুন ভবন নির্মাণ করতে না দিয়ে নির্মাণ করেন স্কুলের খেলার মাঠে। এতে গ্রামের ছাত্র যুবকের হৃদয়ে চরম আঘাত পড়ে। এলাকার খেলাধুলার একমাত্র মাঠটি আর খেলার মাঠ থাকল না, হয়ে যায় স্মৃতি। টুর্নামেন্ট পর্যন্ত আয়োজন করা হতো এই মাঠে। এছাড়াও মাঠের সাথে দক্ষিণ পাশে পুকুর ছিল একটা, উত্তর পাশে খালি জমি ছিল। পরবর্তীতে সেইগুলোও দখল করে প্রধান শিক্ষক এর পরিবার। বড় অবাক করা বিষয়, সীমানা ঠেলতে ঠেলতে স্কুল টয়লেটের দরজা পর্যন্ত খোলা যাচ্ছেনা বহু বছর।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোনো বিশাল বড় কড়ই গাছটি কেটে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি। যে গাছ পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ছায়া দিত, আর সে ছায়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলা করতো। কিন্তু প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সাত বছর আগে বিশাল কড়ই গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। তখন এই বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা, বন বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন এলাকাবাসী। অভিযোগ প্রমাণিত হবার পরেও গত সরকারের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কিভাবে সব কিছু থেকে পার পেয়ে যায় জানে না এলকাবাসী।
সম্প্রতি আবারো শুরু করেন সেই চিরচেনা চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। বছরের পর বছর বদলি ঠেকিয়ে প্রধান শিক্ষক নানান অনিয়ম দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়ার সাহসে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ১২ এপ্রিল ২৫ তারিখ পুনরায় স্কুলের কয়েকটি আকাশমনি গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। আশ্চর্যের বিষয়, গাছের চিহ্ন মুছে দিতে গভীর রাতে মাটি কাটার গাড়ি এনে গাছ দুটির মূল তুলে ফেলার চেষ্টা করেন এবং তৎমধ্যে একটি গাছের মূল শেকড় তুলে ফেলেন। আরেকটি গাছের মূল শেকড় মাটি দিয়ে ঢেকে দেন, যার প্রমাণ রয়েছে। ঘটনা জানাজানি হলে পরের দিন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তানভীর কেটে ফেলা গাছের গোড়ার ভিডিও করতে গেলে প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন দেখে পেলে। তারপর তানভীরকে ধাওয়া করেন তিনি। তানভীর কোনমতে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচে।
প্রতি বছর স্কুলের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ লাখ অর্থের অল্প টাকার কাজ দেখিয়ে অনুগত পকেট কমিটি থেকে পুরো টাকার ভ‚য়া রশিদ নেন। আমাদের গ্রাম রোহিঙ্গা ক্যাম্প উপজেলায় হওয়ায় নানান সময়ে এনজিওদের অনুদান বরাদ্দ হবার কথা, এই সম্পর্কেও এলকাবাসী কোন তথ্য জানে না।
ইন্টারনেট সংযোগ সরঞ্জামসহ স্কুলের জন্য সরকারিভাবে ল্যাপটপ দেয়া হয়। যেদিন ল্যাপটপ গ্রহণ করেন তিনি, এরপরে আর কখনো কেউ স্কুলে আর দেখা যায়নি বলে জানা যায়। ল্যাপটপ প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের বাসায় ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। বিদ্যালয়ে আরো না জানা অর্থ অনুদান বরাদ্দ দিয়ে থাকতে পারে যা কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত এনজিওর পক্ষ থেকে ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য দৈনিক বরাদ্দ করা বিস্কুট বছরের পর বছর নিজের বাড়িতে, আত্মীয় স্বজন এবং এলাকার মানুষকে দিয়ে নিজের অনুগত করার চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক।
সম্প্রতি এলাকার সকল সর্বস্তরের মানুষ প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে উল্টো এলাকার মানুষের উপর মিথ্যা বানোয়াট নিউজ করে মিডিয়াতে প্রচার করছেন। তিনি ও তার পরিবার গ্রামের সম্মানিত ব্যক্তির উপর নানা মিথ্যা অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট কমেন্ট করে যা”েছন, যা মিথ্যা ও মানহানির মামলার যোগ্য অপরাধ। গাছ কাটার দূর্নীতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য উল্টো থানায় গিয়ে ‘গাছ চুরির হয়েছে’ মর্মে মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে জানা যায়। এবং তাদের বাড়িতে হামলা করেছে বলে মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করছেন তিনি ও তার পরিবার।
এতে তারা স্মারকলিপিতে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো:
১. বর্তমান প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিনকে অনতিবিলম্বে এই বিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহার করে এলাকা এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
২. বর্তমান প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের বিগত ১৬ বছরের সকল অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এর সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আন্ত: বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মরহুম মকবুল আলী মুন্সীর নাম অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
৪. বর্তমান বিদ্যালয়টি বন বিভাগের জায়গায় স্থাপিত হলে এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বন বিভাগ অত্র জায়গাটি স্কুলের বরাবরে ডিপরেষ্ট্রেশন করেন। স্কুলের পক্ষে জায়গাটি নিয়ম মাফিক বুঝে নেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষক রসিদ আহমদ। কিš‘ বর্তমান প্রধান শিক্ষক বিভিন্নভাবে চলচাতুরি করিয়া স্কুলের
৫. ডি-ফরেষ্ট্রেশনকৃত জায়গাটি অনেকাংশ তাহাদের বাড়ি ভিটের সাথে অন্তর্ভুক্ত করে নেন। তাহা পেরত দিতে হবে।
৬. বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় যে পরিমাণ জমি ছিল সকল পরিমাণ জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সেই জমিতে খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে সীমানা প্রাচীর বা পিলার স্থাপন করে দিতে হবে।
৭. বিদ্যালয়ের বর্তমান এডহক কমিটিতে কে কে আছেন তা প্রকাশ এবং অভিভাবক, এলাকার সচেতন, সাধারণ মানুষের সম্মতিতে কমিটি প্রকাশ্যে পুনর্গঠন করতে হবে।
৮. আমাদের প্রাণের এই উত্তর পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রামের বাইরের একজন সাংগঠনিক দক্ষতা আছে এমন কর্মঠ, শিক্ষা বান্ধব প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।