এনসিপির কাউকে ভালো লাগলে ভোট দেবেন, না হলে দেবেন না : সারজিস আলম

 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে নেতারা জনগণের পকেটে টাকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে বয়স্ক ভাতাসহ সব কিছু মেরে দিয়েছে। যাদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের হাত ধরেই এসেছে এনসিপি। আগামী নির্বাচনে অন্ধ ভক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। জাতীয় নাগরিক পার্টির কাউকে ভালো লাগলে ভোট দেবেন না হলে দেবেন না।


সোমবার (২৬ মে) দুপুর এনসিপির পক্ষ থেকে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলার সকল উপজেলার পথসভা এবং লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডোমার উপজেলার পথসভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।



সারজিস আলম বলেন, শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে ক্ষমতা ছাড়ার চিন্তাও না করে। আগামীতে আপনারা মার্কা দেখে ভোট না দিয়ে ভালো মানুষ দেখে ভোট দেবেন। সেই ব্যক্তি কোনো দলের হোক বা না হোক, তার মার্কা থাকুক বা না থাকুক, সে যদি মানুষ ভালো হয়, সে আপনাদের জন্য কাজ করবে। আর যে ব্যক্তি চাঁদাবাজি করবে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেবেন না। আপনারা প্রতিবাদ গড়ে তুলবেন, এই প্রতিবাদ জারি রাখবেন। না হইলে তারাও এক সময় আপনাদের গলা চেপে ধরবে। আপনারা চোখ কান খোলা রাখবেন, আপনাদের আশপাশে এখনো অনেক সিন্ডিকেট তৈরি হবে। অনেক মানুষ ক্ষমতার অপব্যবহার করবে। এই মানুষগুলোকে শুরুতে যদি প্রতিবাদ করে প্রতিহত না করেন এরাই আবার ধীরে ধীরে আপনাদেরকে জিম্মি করে ফেলবে।


তিনি বলেন, নীলফামারীতে আগে জেলায় চাঁদাবাজি চলতো। এখন উপজেলায় চলে। অটো থেকে চাঁদাবাজি করা হয়, ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। পিকআপ থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। এই অল্প কয়েকটি লোক সে যেই দলেরই হোক দেখার সময় নেই। সকলে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন।



সারজিস আলম বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে এমন কোনো অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা যেন না বলি। এখন সরকারে যারা আছে তারা সরাসরি কোনো দলের প্রতিনিধি না। তারা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শক্রমে সরকারে জায়গা করে নিয়েছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন দ্রুত দিতে হবে এটা কথা হতে পারে না। বরং কথা এটা হতে পারে যে নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হওয়ার জন্য সামগ্রিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে বিচার এবং সংস্কার শেষে নির্বাচন হতে হবে।


বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য সম্পর্কে সারজিস বলেন, আমরা দেখেছি আগে এমপিরা টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনত। তারা দলীয় প্রভাবে নির্বাচিত হত এবং জনগণের কথা চিন্তা না করে তার ওপরে যে নেতা তাকে তেল দিয়ে ও মেইনটেন করতে তার দিন যেত। কিন্তু জনগণের দিকে খেয়াল করার সময় পায়নি। এসব নেতারা নির্বাচনের আগে জনগণের পকেটে ৫০০/১০০০ টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে জনগণকে প্ররোচিত করত এবং নির্বাচনের পরে সকল সেবায় ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নামে হাজার হাজার টাকা জনগণের পকেট থেকে নিয়েছে। তিনি আগামী নির্বাচনে দল মত না দেখে ভালো মানুষকে নির্বাচিত করে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।



এর আগে তিনি ডোমার উপজেলা শহরে বৃষ্টিতে ভিজে গণসংযোগ করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারোয়ার তুষার, ড. আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান, সাদিয়া ফারজানা দিনা, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিওন প্রমুখ।


প্রসঙ্গত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চলমান জাতীয় রাজনীতিতে বিকল্প ধারার নেতৃত্ব প্রদানের লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে। দলটি ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংগঠন গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেছে। নীলফামারী জেলায় এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলে এনসিপির তৃণমূল পর্যায়ে জনসংযোগ এবং সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদার হবে বলে আশা করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।