কক্সবাজার পৌরসভার কোটি টাকার সৌরবাতি সাড়ে তিন বছরেই নষ্ট।

আব্দুল কুদ্দুস কক্সবাজার শহরের অন্ধকার দূর করতে সাড়ে তিন বছর আগে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়েছিল সৌরচালিত (সোলার প্যানেল) ১৫০টি সৌরবাতি। এর এক বছরের মাথায় নষ্ট হয়ে যায় ৩২টি সোলার প্যানেল। রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে বর্তমানে ১৪০টি সোলার প্যানেল অচল হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সরেজমিন এমন চিত্র চোখে পড়েছে। জলবায়ু তহবিলের প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন গলির মোড়, মসজিদ-মন্দির, কবরস্থান, শ্মশান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আশপাশে এসব সোলার প্যানেল স্থাপন করা হলেও এখন কোনো কাজে আসছে না। বরাদ্দ না থাকায় পৌর কর্তৃপক্ষ প্যানেলগুলো সংস্কার করতে পারছে না। পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছৈয়দুল হক আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটিএফ) অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ করেছিল ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এক্সপোর্ট রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্যানেলগুলো স্থাপনের কাজ শেষ হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর এক বছর সোলার প্যানেলগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, ঝোড়ো হাওয়ার আঘাত এবং ভারী বর্ষণে সোলার প্যানেলগুলো অচল হয়ে পড়ে। পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন অচল প্যানেলগুলোর অধিকাংশের তার ছিঁড়ে গেছে। বাল্বও নষ্ট। প্যানেলগুলো সংস্কারের জন্য যে পরিমাণ টাকার দরকার, এই মুহূর্তে পৌরসভার কাছে তা নেই। টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্যানেলগুলো সংস্কার করা হবে। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া জামে মসজিদের গেটের সামনে স্থাপন করা হয়েছিল একটি সোলার প্যানেল। এক বছর আগে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, প্যানেলের বাল্ব নষ্ট। ২০ আগস্ট দুপুরে গিয়ে একই অবস্থা দেখা গেছে। দীর্ঘ আড়াই বছরেও বাল্ব লাগিয়ে প্যানেলটি চালু করা যায়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, রাতের অন্ধকারে মুসল্লিদের মসজিদে ঢুকতে কষ্ট হয় বলে প্যানেলটি স্থাপন করা হয়েছিল। এরপর টানা ছয় মাস আলো পাওয়া গেলেও পরবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে বাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে তারও ছিঁড়ে গেছে। খানিকটা দূরে সমিতিপাড়ার কাঠের সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটি সোলার প্যানেল। সেটিও অচল দেড় বছর ধরে। স্থানীয় জেলে সাব্বির আহমদ বলেন, অন্ধকারে কাঠের সেতু পার হতে নারী ও শিশুদের কষ্ট হয়, আতঙ্কে থাকতে হয়। ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়া, বাসিন্যাপাড়া ও ফদনারডেইল পাড়ায় একটি করে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছিল। এখন কোনোটিতে বাতি জ্বলে না। পৌরসভার তথ্যমতে, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮টি মহল্লাতে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু। এই এলাকায় দেড় বছর ধরে সোলার প্যানেলগুলো অচল থাকায় শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি বাড়ছে। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, তাঁর এই ওয়ার্ডে ৮টি সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক বছরে মাথায় চারটি প্যানেল অচল হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে অবশিষ্ট প্যানেলগুলোও অচল হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় প্যানেলগুলো সচল করা যাচ্ছে না। শহরের পাহাড়তলী, এন্ডারসন সড়ক রুমালিয়ারছড়া, তারাবনিয়ারছড়াসহ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও ১৪২টি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে ১৪০টি প্যানেল অচল পড়ে আছে। ধুলাবালু জমে সোলার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোনাপাড়া, বৈদ্যঘোনা, গোলদিঘির পাড়সহ বিভিন্ন এলাকার জন্য বরাদ্দ ছিল ৮টি সৌর প্যানেল। সম্প্রতি এলাকার গিয়ে কোনো প্যানেল চোখে পড়েনি। এর কারণ জানতে চাইলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রাজ বিহারী দাশ বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে ৯০ শতাংশ মানুষ সনাতন ধর্মের অনুসারী। তাঁদের চাহিদা পূরণের জন্য প্যানেলগুলো ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটের মহাশ্মশানে স্থাপন করা হয়। সৌর প্যানেল স্থাপনের পর মহাশ্মশান এলাকা আলোকিত হয়েছে। তবে এখন দুটি ছাড়া অবশিষ্ট প্যানেলের বাতি নষ্ট হয়ে গেছে। কক্সবাজার পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী রুমেল বড়ুয়া বলেন, কাউন্সিলদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী মসজিদ-মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, শ্মশানে ১৬৫ ওয়াট ধারণক্ষমতার সোলারের সঙ্গে ৬০ ওয়াটের বাল্ব লাগানো হয়েছিল। প্রতিটি প্যানেলের বিপরীতে খরচ হয়েছিল ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। কিন্তু বিভিন্ন সময় ঝড়বৃষ্টি, ধুলাবালুতে প্যানেলগুলো নষ্ট হয়েছে। কিছু সোলার ভেঙে গেছে, কিছু খুঁটি হেলে পড়েছে। টাকার অভাবে সংস্কার করা যাচ্ছে না। সূত্র: প্রথম আলো