কার্যালয়ে যাচ্ছেন না মেয়র-কাউন্সিলররা/ চসিকে সেবা প্রার্থীদের দু র্ভো গ



বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। সেদিন থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম অনেকটা থমকে যায়। চসিকের মেয়রের পাশাপাশি ওয়ার্ড কাউন্সিলররা আসছেন না কার্যালয়ে। ফলে বন্দরনগরীর বাসিন্দাদেরকে সেবা প্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।


সূত্র মতে ৫ই আগস্ট থেকেই  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আত্মগোপনে চলে গেছেন। মেয়র কোথায় অবস্থান করছেন কিংবা কবে নাগাদ অফিস শুরু করবেন তার কোনো তথ্য জানা নেই চসিক কর্মকর্তাদের। এমনকি তিনি তার বাড়িতেও নেই। বন্ধ রয়েছে তার মোবাইল ফোন। 


৫ই আগস্ট সরকার পতনের দুদিন আগে ৩রা আগস্ট চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা হয়। এরপর ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানান মেয়রের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন। মেয়রের পাশাপাশি চসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও এখন আসছেন না কার্যালয়ে।


এদের অনেকেই কোটা আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছেন।

মেয়র-কাউন্সিলররা না আসায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এরমধ্যে ওয়ার্ড কার্যালয়ে কাউন্সিলররা না আসায় সেবা প্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয়তা সনদ, চারিত্রিক সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, ওয়ারিশান সনদ নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন সাধারণ নাগরিকরা। এসব সনদে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর লাগে। কিন্তু এখন তা ইস্যু করা যাচ্ছে না। কিছু কিছু ওয়ার্ড কার্যালয়ে ওয়ার্ড সচিব ও কর্মীরা আসলেও এখনো সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মেয়র স্যার না আসায় প্রকল্পের এস্টিমেট ফাইলে সই হচ্ছে না। টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। কোনো ধরনের প্রকিউরমেন্ট করা যাচ্ছে না। জরুরি অনেক কাজ আটকে আছে। আর কাউন্সিলররা না আসায় ওয়ার্ডের সেবা কাজও অনেকটা আটকে আছে।


চসিক সূত্রে জানা যায়, সরকার পতনের দিনই চসিকের  ৩২টি ওয়ার্ড কার্যালয়ে আগুন, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আনুমানিক চার কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।


৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড মিলে চসিকের কাউন্সিলর কার্যালয় আছে ৫৫টি। এর মধ্যে ৩২টি কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড। সেখানে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়। ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়া, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে ৩৫ হাজার টাকা, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে এক লাখ টাকা, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ২৫ লাখ টাকা, ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে ১০ লাখ টাকা, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একইভাবে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ২ লাখ ১০ হাজার, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ৫ লাখ টাকা, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে এক লাখ টাকা, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ৩৫ হাজার টাকা, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ও ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে এক লাখ টাকা করে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।


১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ টাকা, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে ৫ লাখ টাকা, ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডে ২ লাখ টাকা, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে ২০ হাজার টাকা, ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে দেড় লাখ টাকা, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডে ক্ষতি হয়েছে ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা।

৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ডে ২০ হাজার টাকা, ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে ৭৮ হাজার টাকা, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে এক লাখ টাকা, ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ও ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে ২০ হাজার টাকা করে, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ৫০ হাজার টাকা এবং ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৩ ও ৭ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে এক লাখ টাকা করে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৫ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার। ৯ নম্বর সংরক্ষিত আসনে ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে যে ৯টি ওয়ার্ডে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি সেগুলো  হলো ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ২০ নম্বর দেওয়ান বাজার, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী, ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ী, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ও ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড।


চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চসিকের সচিবালয় বিভাগ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সচিবদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে নাগরিক সেবা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নগরীর পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম, রাজস্ব বিভাগের কার্যক্রম চালু হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। দ্রুতই নাগরিক সেবা পূর্বাবস্থায় ফেরাতে কাজ চলছে।