ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টারে নার্সের অবহেলায় শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু
Tuesday, July 15, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঈদগাঁও;
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান—ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে নার্সের অবহেলায় মাত্র এক বছর বয়সী শিশু সোহানার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিহত শিশু সোহানা জালালাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব লরাবাক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাকিব ও শারমিন আক্তার দম্পতির একমাত্র কন্যা।
পরিবারের দাবি, গত ১২ জুলাই সর্দি-কাশির কারণে শিশুটিকে ওই হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল হকের কাছে নেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণের পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পরদিন ১৩ জুলাই আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেদিন চিকিৎসকের নির্দেশে শিশুটিকে ইনজেকশনের মাধ্যমে Eryxion 1g (Ceftriaxone) নামক একটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিশুর পরিবারের অভিযোগ, ইনজেকশনটি ফার্মেসি থেকে আনার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স জোৎনা আক্তার মাত্র ৫–১০ সেকেন্ডের মধ্যে তা পুশ করেন। সঙ্গে সঙ্গেই শিশুর হাতে ফোলাভাব দেখা দেয়। বিষয়টি জানানো হলেও নার্স এটিকে “সাধারণ প্রতিক্রিয়া” বলে উল্লেখ করে শিশুটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
তবে বাড়ি ফেরার পথে শিশুটির অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। শুরু হয় খিঁচুনি ও অস্থিরতা। পরিবারের লোকজন দ্রুত শিশুটিকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিশুটির বাবা-মা বলেন, সোহানার কোনো জটিল রোগ ছিল না। শুধুমাত্র নার্সের অদক্ষতা ও দায়িত্বহীন আচরণের কারণেই আমাদের সন্তানকে হারাতে হয়েছে।
অভিযুক্ত নার্স জোৎনা আক্তার বলেন, “আমি অন্যান্য রোগীদের যেভাবে ইনজেকশন দিই, সোহানাকেও সেভাবেই দিয়েছি। কোনো গাফিলতি করিনি।”
তবে ঈদগাঁওর আরেক বেসরকারি হাসপাতালের এক এমবিবিএস চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, Eryxion 1g ইনজেকশন দ্রুত পুশ করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এটি ধীরে, অন্তত ১০–২০ মিনিট সময় নিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। তা না হলে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই ধরনের ওষুধ প্রয়োগে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত নার্সের উপস্থিতি অপরিহার্য।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, শিশুটি হাসপাতালে যাওয়ার আগেও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু রাতে হঠাৎ চিৎকার শুনে তারা ছুটে গিয়ে দেখেন শিশুটি অস্থিরভাবে কাঁপছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তারা বলেন, “এ মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রতিবেদকের প্রশ্নে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এহছান হক জানান, অভিযুক্ত নার্সকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। তবে দায় এড়িয়ে তিনি বলেন, “মৃত্যু আল্লাহর হাতে, আমরা তো চেষ্টা করেছি।”
শিশু সোহানার পরিবার জানিয়েছে, তারা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও করছে পরিবার ও এলাকাবাসী।
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—আর কত অবহেলায় ঝরে যাবে নিষ্পাপ প্রাণ? প্রতিটি হাসপাতালে কি দক্ষ ও সনদপ্রাপ্ত নার্স নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে না?