উখিয়ায় দোকানদার কর্তৃক নারীকে মারধর ও শ্লীলতাহানি, থানায় মামলা
Saturday, July 12, 2025
কক্সবাজারের উখিয়ায় তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে দোকানদার কর্তৃক বড়ুয়া সম্প্রদায়ের এক নারীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
ক্রয় করা ‘শাড়ী পাল্টে না দেওয়ার’ বিরোধকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।
উখিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল খালেক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ভূক্তভোগী নারী বাদী হয়ে দুইজনকে আসামী করে দায়ের মামলাটি থানায় নথিভূক্ত করা হয়েছে।
মামলার আসামীরা হল, উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক রুমখাঁ ক্লাসপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাশেম ওরফে লুলুর ছেলে আব্দুল হক (৪০) এবং মৃত মোহাম্মদ নুর নবীর ছেলে মোহাম্মদ হাসেম ওরফে লুলু (৬৩)। আসামিরা কোটবাজার স্টেশনের চৌধুরী মার্কেটের জাহানারা বস্ত্র বিতানের স্বত্তাধিকারী।
ভূক্তভোগী নারী দীপু বডুয়া (৪৯) উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম রত্না এলাকার অনন্ত বড়ুয়ার স্ত্রী।
মামলা নথির বরাতে তদন্তকারি কর্মকর্তা আব্দুল খালেক বলেন, গত ৮ জুলাই বিকালে কোটবাজার স্টেশনের চৌধুরী মার্কেটস্থ জাহানারা বস্ত্র বিতান থেকে দীপু বড়ুয়া ২ টি শাড়িসহ আরও কিছু কাপড় চোপড় ক্রয় করেন। তিনি ক্রয় করা একটি শাড়ী অপছন্দ হওয়ায় পরদিন সন্ধ্যায় দোকানটিতে আরেকটি শাড়ী পাল্টিয়ে আনতে যান।
“এনিয়ে দোকানের লোকজনের সাথে ওই নারীর তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ওই নারীকে দোকানের মালিকরা মিলে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে বলে এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার পর ভূক্তভোগী নারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। “
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার রাতে ঘটনায় ভূক্তভোগী নারী বাদী হয়ে দুইজনকে আসামী করে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পুলিশ ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ খবর সত্যতা পাওয়ায় মামলাটি নথিভূক্ত করেছে।
ভূক্তভোগী নারী দীপু বড়ুয়া অভিযোগ করে বলেন, ক্রয় করা একটি শাড়ী অপছন্দ হওয়ায় পাল্টিয়ে আরেকটি দেওয়ার জন্য তিনি দোকানদারকে অনুরোধ করেন। কিন্তু দোকান শাড়ী পাল্টে না দিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু করেন। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে আশপাশের লোকজনও শাড়িটি পাল্টে দেওয়ার কথা জানায়। এতে দোকানদার উল্টো ক্ষেপে গিয়ে তাকে অশ্রাব্য গালাগাল করতে থাকে।
“এসময় প্রতিবাদ করলে দোকানদার আব্দুল হক ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বুকে সজোরে লাথি মারেন। এতে লুটিয়ে মাটিতে পড়ে গেলে দোকানদার মোহাম্মদ হাশেম হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আমার মেয়ে ও ছোট জা ( দেবরের স্ত্রী ) উদ্ধারের চেষ্টা চালালে তাদেরও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আব্দুল হক চুলের মুঠি ধরে আমাকে টানা হেঁচড়া করে এক প্রকার বিবস্ত্র অবস্থায় দোকান থেকে বের করে দেয়। “
মামলার বাদী এ নারী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে স্বজনরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এসময় আঘাতের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এদিকে মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে প্রভাবশালী লোকজন কর্তৃক চাপ প্রয়োগ এবং স্থানীয় দোকান মালিক সমিতিকে ব্যবহার করে ভূক্তভোগীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন, ভূক্তভোগী নারীর দেবর অজিত বড়ুয়া।
তিনি বলেন, মামলা তুলে নিতে কয়েকজন প্রভাবশালী লোক তাদের উপর নানাভাবে চাপ অব্যাহত রেখেছে। শনিবার রাতে কোটবাজারস্থ দোকান মালিক সমিতি কথিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল খালেক জানান, মামলাটি তদন্তের পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।