পর্যটন এলাকার স্বাস্থ্যসেবায় সম্ভাবনা দেখাচ্ছে উখিয়া ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল

কক্সটিভি প্রতিবেদক: পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ যেতে চোখে পড়ে মহাসড়ক লাগোয়া দৃষ্টি নন্দন এক হাসপাতাল। নাম ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল উখিয়া। বাংলাদেশ-মায়ানমার মৈত্রী সড়ক পেরিয়ে উখিয়া উপজেলার স্থানীয় বালুখালি পানবাজার এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালটি। মূলত মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হলেও, এখন সবার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা মিলছে এখানে। মনোরম পরিবেশ, চিকিৎসা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য, রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়দের কাছে এটি পরিচিত ধলা হসপাতাল হিসেবে। হাসপাতালটি পরিচালনা করছে দেশের অন্যতম সামজিক সংস্থা ’ফ্রেন্ডশিপ’।
বাইরে থেকে উখিয়ার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের দৃশ্য কাছে টানবে যে কাউকে। এই হাসপাতালেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন স্থানীয় পালংখালীর হালিমা, উখিয়া সদরের বুলবুল আকতার ও হোসনে আরা। ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, ‘বর্তমানের স্বাভাবিক প্রসব বা নরমাল ডেলিভারি কল্পনাতীত। আর অস্ত্রপচার বা সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী মা ও নবজাতকের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করা বেশ ব্যয় বহুল। ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনা খরচে এমন স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে খুবই উচ্ছসিত তারা। হাসপাতালের সেবা নিয়ে সুস্থ হওয়া স্থানীয় পালংখালীর খালেদা বেগম ও সাফা আহমেদ জানান, ‘স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশও ভাল। পর্যপ্ত আলো-বাতাস আর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, রোগিকে মানসিকভাবেও সুস্থ করে তোলে।‘ উখিয়ার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ সেবার অন্যতম হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা। এখানে আছে অত্যাধুনিক ল্যাব সার্ভিস। যেখানে, উপযুক্ত পরিবেশে ডায়বেটিস, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, পেশাব পরীক্ষা এবং ম্যালেরিয়া, এইচ আই ভি, হেপাটাইটিস পরীাক্ষা, রোগ সনাক্ত ও চিকিৎসা দেয়া হয়।
ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের ফ্যাসিলিটি ইনচার্জ ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানান, ২০ জনের বেশি চিকিৎসক এবং প্রায় ৪০ জন মিডওয়াইফারী ও নার্স নিয়োজিত আছেন রোগিদের সেবায়। মা ও শিশু স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তোলা ৩৮ বেডের হাসপাতালটিতে, অন্তত ৩৫টি বেডে সব সময় রোগি থাকেন। অত্যাধুনিক দু’টি অপারেশন থিয়েটার বা অস্ত্রপচার কক্ষ আছে এখানে। প্রতি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগির ৫০০-এর বেশি। আর এ পর্যন্ত সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ৬১৭৭জন। ডাঃ সাইফুল জানান, মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে এগিয়ে চলা হাসপাতালে দেয়া হচ্ছে জরুরী এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা। যা স্থানীয় বা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কক্সবাজার-টেকনাফ চলাচলকারী যাত্রী ও পর্যটকদের জরুরী চিকিৎসায় খুলেছে নতুন দুয়ার। মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি আশ্রয় নেয় কক্সবাজারের সবুজ পাহাড় ঘেরা উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলায়। কৃষি ‍ও ক্ষুদ্র ব্যবসা নির্ভর কয়েক হাজার স্থানীয় বাসিন্দার বসবাসের জায়গায় চলে আসে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। ফলে এই এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পড়ে চ্যালেঞ্জের মুখে। তাই স্থানীয় গণমানুষের প্রত্যাশা, এ অঞ্চলে মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত এবং সুস্বাস্থ্য বিবেচনায় ভাল ভূমিকা রাখতে পারে উখিয়া ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।