স্বামী মো. তারেককে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলেও এখন নিজেই জীবনযুদ্ধে একা, লড়ছেন নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য
Thursday, July 03, 2025
৩৫ বছর বয়সী উম্মে সাহেদীনা টুনির এমন আত্মত্যাগের গল্প অনেককে আবেগপ্রবণ করলেও বাস্তবতা যেন চরম নির্মম।
স্বামী মো. তারেককে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলেও এখন নিজেই জীবনযুদ্ধে একা, লড়ছেন নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে মালয়েশিয়া প্রবাসী মো. তারেকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন টুনি।
২০০৭ সালে তাদের সংসারে আসে একমাত্র ছেলে আজমাইন দিব্য। সুখের দিন যেন বেশিদিন স্থায়ী হলো না।
২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়েই তারেকের ধরা পড়ে জটিল কিডনি রোগ। উভয় কিডনিই প্রায় অচল। ডাক্তার জানিয়ে দেন, নিয়মিত ডায়ালাইসিস না করালে মৃত্যু অনিবার্য।
পরিবার, সমাজ সবাই মুখ ফিরিয়ে নেয়, পাশে থাকেন শুধু স্ত্রী টুনি। উন্নত চিকিৎসার আশায় স্বামীকে নিয়ে ছুটে যান ভারতের সিএমসি হাসপাতালে।
বছরের পর বছর নিজের আয়, স্বর্ণালংকার এমনকি মায়ের পেনশনের টাকা খরচ করে স্বামীর চিকিৎসা চালিয়ে যান।
২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসক কেএন সিংয়ের তত্ত্বাবধানে টুনি নিজের কিডনি দেন স্বামীকে।
সফলভাবে প্রতিস্থাপন শেষ হয়। ভেবেছিলেন, হয়তো দুর্দিনের অবসান ঘটল। কিন্তু বাস্তবে শুরু হলো জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়।
সুস্থ হওয়ার পরপরই বদলে যেতে থাকেন তারেক। ঢাকায় ফিরে অনলাইন জুয়া, পরকীয়া প্রেমে মত্ত হন।
বিভিন্ন সময় স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। একপর্যায়ে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন টুনিকে, বসবাস শুরু করেন ডিভোর্সি পরকীয়া প্রেমিকা তাহমিনা মেরির সঙ্গে।
পরে বাধ্য হয়ে ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাভার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন টুনি। তারেক কৌশলে একদিন পরই মুচলেকা দিয়ে অভিযোগ তুলে ফেলেন।
কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকায় টুনি আবারও আইনের আশ্রয় নেন।
২২ এপ্রিল ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারী নির্যাতন ও যৌতুক আইনে মামলা করেন।
২৪ এপ্রিল তারেক গ্রেপ্তার হন, তবে ৪ জুন জামিনে ছাড়া পান।
জামিন পেয়েই আত্মগোপনে চলে যান এবং স্ত্রীর ওপর ডিভোর্সের চাপ দিতে থাকেন।
টুনি জানান, তারেককে কিডনি দেওয়ার পর আমি সাত দিন আইসিইউতে ছিলাম।
সেখানেই শুনি আমার খালার টাকা পাঠাতে দেরি হওয়ায় সে আমাকে চিৎকার করে গালি দিচ্ছে। অপারেশনের পরে হাসপাতালেই সে আমার ওপর চড়াও হয়।
তিনি বলেন, তারেক এখন আমাকে ডিভোর্স দিতে ও বাড়িটা নিজের নামে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছে। আমি শুধু চাই, এই প্রতারক যেন শাস্তি পায়। কেউ যেন এমন বিশ্বাসঘাতকতার শিকার না হয়।
প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের পর টুনি যেভাবে স্বামীকে আগলে রেখেছে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। নিজের কিডনি দিয়ে বাঁচিয়েছে। অথচ সেই তারেক এখন তাকে মারধর করছে, প্রেমিকার সঙ্গে থাকছে।
টুনির মা বলেন, আমার পেনশনের সব টাকা তারেকের চিকিৎসায় খরচ করেছি। আজ সেই ছেলে আমার মেয়েকে বের করে দিল! বিচার চাই।
টুনির আইনজীবী অ্যাডভোকেট নেহার ফারুক বলেন, তারেক শুধু নারী নির্যাতন নয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন লঙ্ঘন করেছেন।
প্রতারণার মাধ্যমে স্ত্রীর কিডনি নিয়ে পরে তার ওপর নির্যাতন করেছেন। আমরা চার্জশিট হাতে পেলেই জামিন বাতিলের আবেদন করব।
এদিকে, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে তারেকের খোঁজ নেই। নিজের নম্বরও পরিবর্তন করে ফেলেছে । ফলে তার সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
একটি সুত্র জানায় তারেক তার পরকীয়া প্রেমিকে বিয়ে করেছে।