ডিসেম্বরের মধ্যেই খাদ্যসংকটে পড়ছে দেশ; সবচেয়ে ঝুঁকিতে কক্সবাজার

কক্সটিভি নিউজ ডেস্ক: দেশের দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোর প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়তে পারে। একই সময়ে প্রায় ১৬ লাখ শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ) এবং জাতিসংঘের তিনটি সংস্থার যৌথ বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন–মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইউনিসেফ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) যৌথ উদ্যোগে 'ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৩৬ জেলার মোট ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকাতেই ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে। তবে সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: কক্সবাজারের মানুষ, বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফের ৩০ শতাংশ খাদ্যসংকটের সম্মুখীন। এছাড়া কক্সবাজার ও ভাসানচর মিলিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্যসংকট ও জরুরি অবস্থায় (ধাপ-৪) পড়তে যাচ্ছে। দায়ী কারণসমূহ: অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু বিপর্যয়, তহবিলের অভাব, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং খাদ্যবৈচিত্র্যের অভাবকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা ১৩ জেলা (মে-ডিসেম্বর) : মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে যে ১৩টি জেলার ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্যসংকটে (ধাপ-৩) পড়ার সম্মুখীন হচ্ছে, সেগুলো হলো: বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বান্দরবান, রাঙামাটি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার। দ্রুত উন্নতি: জানুয়ারি-এপ্রিল মাসে খাদ্যসংকটে থাকা নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের পরিস্থিতি কিছুটা কমে ধাপ-২ এ উন্নীত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, "আইপিসি প্রতিবেদনের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি না। সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কমানো হচ্ছে।" ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স সতর্ক করে বলেন, অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুরা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারবে না এবং শিশুদের পুষ্টিতে নজর না দিলে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারবে না। প্রতিবেদনের সুপারিশে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা ও খাদ্যনিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, পুষ্টিসেবা ও নজরদারি বাড়ানো এবং কৃষি ও মৎস্য খাতে সহায়তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।