১৬ ডিসেম্বর—আমাদের মহান বিজয় দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর পরাজিত হয়েছিল শোষণ ও নির্যাতনের শক্তি, বিজয় অর্জিত হয়েছিল বাঙালির অদম্য সাহস, ত্যাগ ও ঐক্যের মাধ্যমে। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র—বাংলাদেশ। মহান বিজয় দিবস কেবল একটি দিবস নয়, এটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়, মর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা আমাদের শিখিয়েছে মাথা উঁচু করে বাঁচতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল থাকতে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর—সর্বত্রই এই দিনে ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, ত্যাগের গল্প আর বিজয়ের গৌরব। ১৯৭১ সালে সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র—সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে গড়ে উঠেছিল প্রতিরোধের দুর্ভেদ্য প্রাচীর। অপ্রতিরোধ্য সাহস আর সীমাহীন ত্যাগের মধ্য দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রমাণ করেছিলেন—স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা কখনো দমিয়ে রাখা যায় না। তাদের সেই আত্মত্যাগের কারণেই আজ আমরা স্বাধীন আকাশের নিচে কথা বলতে পারি, নিজের পরিচয়ে গর্ব করতে পারি। মহান বিজয় দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় দায়িত্বের কথাও। স্বাধীনতা শুধু ভোগের বিষয় নয়, এটি রক্ষার বিষয়। দেশপ্রেম, সামাজিক দায়িত্ববোধ, ন্যায় ও মানবিকতা—এই মূল্যবোধগুলো ধারণ করলেই শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে। বিভেদ নয়, ঐক্য; ঘৃণা নয়, সহমর্মিতা; অনিয়ম নয়, ন্যায়ের চর্চাই হোক আমাদের প্রতিদিনের অঙ্গীকার। এই দিনে নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান—মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানো, দেশের জন্য কাজ করো, সত্যকে ধারণ করো। স্বাধীনতার চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে গড়ে তোলো একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও মানবিক বাংলাদেশ। মহান বিজয় দিবসে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সকল শহীদকে এবং সম্মান জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের ত্যাগে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। মহান বিজয় দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—স্বাধীনতা কোনো হঠাৎ পাওয়া দান নয়; এটি অর্জিত হয়েছে দীর্ঘ লড়াই, অসীম ত্যাগ আর সীমাহীন কষ্টের মধ্য দিয়ে। মা তার সন্তান হারিয়েছেন, স্ত্রী হারিয়েছেন স্বামী, সন্তান হারিয়েছে তার বাবাকে—তবু বাঙালি জাতি পিছিয়ে যায়নি। এই ত্যাগের বিনিময়েই এসেছে বিজয়ের সূর্য। আজকের এই দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের আত্মসমালোচনারও সময়। আমরা কি স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য বুঝতে পেরেছি? আমরা কি সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পেরেছি, যার জন্য শহীদরা জীবন দিয়েছিলেন? দুর্নীতি, অনিয়ম ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই হবে বিজয় দিবসের প্রকৃত সম্মান। মহান বিজয় দিবস আমাদের শিখিয়েছে—ভয় নয়, সাহস; নীরবতা নয়, প্রতিবাদ; স্বার্থ নয়, দেশই হোক সবার আগে। ব্যক্তি জীবনে সততা, সামাজিক জীবনে ন্যায়বোধ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই আমরা স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে পারি। এই বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক—দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের জন্য সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করব। বিভাজন নয়, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ব। ইতিহাসকে জানব, শহীদদের স্মরণ করব এবং স্বাধীনতার চেতনাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেব। মহান বিজয় দিবসে আবারও গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি সেই সকল বীর সন্তানদের, যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ, একটি লাল-সবুজের পতাকা, একটি পরিচয়। মোঃ জাহেদ আলম (সাগর) টেকনাফ সরকারি ডিগ্রি কলেজ