কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭ পরিবারকে বিআরটিএ'র ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান
Saturday, December 20, 2025
আহসান সুমন ::
কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম এলাকার বাসিন্দা রেমিট্যান্স যোদ্ধা আবদুল মান্নান মজুমদার। দীর্ঘ ৩৪ বছর প্রবাস জীবন শেষে বাকি সময়টা পরিবার পরিজনের সাথে কাটানোর স্বপ্নে দুই বছর আগে দেশে আসেন। কিন্তু তার আকাশ কুসুম সেই স্বপ্ন হঠাৎ ঢেকে দিলো সর্বনাশা কালো মেঘ। একটি ঝড় এলো, মুহুর্তেই তছনছ হয়ে গেলো মান্নানের জীবনের সাজানো সুন্দর গল্পটি।
গেলো মাসের ৫ নভেম্বর পরিবারের সবাই কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার পথে চকরিয়া এলাকায় বেপরোয়া মারছা পরিবহনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস। এতে আবদুল মান্নানের স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক পুত্রসহ মেয়ের শশুরালয়ের আরও দুইজন প্রাণ হারায়। একই পরিবারের ৬ জন মানুষের বিয়োগান্তিক এমন ঘটনা বড়ই মর্মান্তিক, বেদনাবিধুর।
শনিবার সকাল ১১টা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আগে থেকেই উপস্থিত সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭ পরিবারের স্বজনরা।
যেখানে ৩৩ পরিবার চিরতরে স্বজন হারিয়েছেন। দুইজন গুরুতর আহত, বাকি দুইজন সাধারণ।
সব মিলিয়ে ৩৭ পরিবারের চোখে মুখে ছিল শুধুই কান্নার ছাপ।
কারো হাত নেই, কারো নেই পা, কেউ আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, আবার কেউ কেউ এক দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন পরিবারের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মানুষটিকে। এমন বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালে কক্সবাজার জেলায় সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনুদানের চেক তুলে দেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমরান হোসাইন সজীবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে
বিআরটিএ পরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব রুবাইয়াৎ-ই-আশিক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো: মাসুদ আলম, বিআরটিএ কক্সবাজার সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান, কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী, সিভিল সার্জন প্রতিনিধি ডা.মহিউদ্দীন মো. আলমগীর, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি নুরুল ইসলাম হেলালী, শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আবুসহ নিহত ও আহত পরিবারের স্বজনরা বক্তব্য রাখেন।
কক্সবাজার বিআরটিএ অফিস সূত্র জানায়, অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে যাত্রী, পথচারী, চালক ও হেলফার পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত পরিবারের সদস্যদের সর্বনিম্ন ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা এবং নিহত পরিবারের প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত; সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর কক্সবাজার-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালী ঢালা নামক স্থানে মারছা পরিবহন ও একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ফারজানা মজুমদার, রুমেনা বেগম ওরফে রুমি, সাদিয়া হক, ফারহানা মজুমদার ও রিজোয়ানা ইসলাম নিহত হন। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হন। নিহত ৬ পরিবারের প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।
অনুদানের চেক গ্রহণ করে নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনেকেই বলেন, প্রিয়জন হারানোর শোক কখনো পূরণ হবার নয়, তবে এই সহায়তা চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও জীবন চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে সকলকে সচেতন হতে হবে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো সরকারের একটি মানবিক দায়িত্ব। এই আর্থিক সহায়তা তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব।
সরকারের নির্দেশনায় সংস্থাটি কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অনুদান নিয়ে। এই অর্থ দিয়ে নিহতদের পরিবার এবং আহত মানুষগুলো জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের।




