আগুন জ্বালিয়ে জন্মদিন পালন, পুড়লো বাইক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কক্সটিভি ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে নিজের জন্মদিন উদযাপন করেছে আলোচিত ব্যবসায়ী আজম সরকার। ৩০তম জন্মদিন উপলক্ষে মাঠে আগুনের অগ্নিশিখায় ফুটিয়ে তোলা হয় ‘ত্রিশ ইয়ারস / 30 Years’, ব্যতিক্রম এই কান্ড ঘটানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কন্টেন্ট বানাতে গিয়ে ঘটনাস্থলে ভস্মীভূত হয়েছে কয়েক লাখ টাকা মূল্যের দামী বাইক (মোটরসাইকেল)। ৭ ডিসেম্বর (রবিবার) দিবাগত রাতে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। মোহাম্মদ শাহ আজম প্রকাশ আজম সরকার হলো স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ জামাল হোছনের ছেলে । সে একজন সফল খামারী এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। তার অনুসারীরা তাকে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করার ঘোষনা দিয়ে চালাচ্ছে প্রচারণা। আজমের ফেসবুকে পোস্ট করা ৩৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আনুমানিক ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের একটি জ্বলন্ত ব্যাডমিন্টন কোর্টে তিনি ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন। ঐ কোর্টের প্রতিটি লাইনে জ্বলছিল অগ্নিশিখা এবং ব্যাডমিন্টন নেট সংলগ্ন বামপাশের পজিশনে মাটিতে আগুন দিয়ে লেখা হয়েছে শাহ আজমের বয়স। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি ইংরেজিতে লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ৩০ ইয়ার্স ডান।’ এরপরই দেওয়া আরেকটি পোস্টে সেই ব্যাডমিন্টন কোর্টে জ্বলন্ত বাইকের (মোটরসাইকেল) ছবি যুক্ত করে তিনি লিখেন, ‘আগুন নিয়ে খেলতে নেই, সাবধান সবাই।’ প্রতিবেদকের হাতে আসা ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওর দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, ‘ পাঁচ লিটারের একটি বোতলে থাকা পেট্রোল পুড়ে যাওয়া বাইকটিতে ঢেলে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টেকনাফের পরিচিত মুখ সেলিম এবং পাশে আগুনের মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শাহ আজম আর ঐ মশাল থেকে মাটিতে পড়ছিলো আগুনের ফুলকি । ভিডিওতে অজ্ঞাত কয়েকটি পুরুষ কন্ঠস্বর’কে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলতে শোনা যায়, ‘আগাগোড়া ঢালো, আস্তে আস্তে ঢালো।আজিয়া গাড়ি ইয়ান জ্বলিবো ফাল্লাই লাগেদ্দিয়া।’ অর্থাৎ ‘আগাগোড়া ঢেলে দাও, আস্তে আস্তে ঢালো। আজকে গাড়ি এটা জ্বলে যাবে মনে হচ্ছে।’ পেট্রোল প্রয়োগের কয়েক সেকেন্ড মূহুর্তের মধ্যেই আগুন লেগে গেলে বাইকটি জ্বলতে শুরু করে, তাৎক্ষণিক সরে যাওয়ায় দূর্ঘটনা থেকে বাঁচেন সেলিম ও আজম সরকার এবং পরবর্তীতে কিছু যুবক পানি ও বালি ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কক্সবাজারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান , ‘ প্রকাশ্যে দাহ্যবস্তু প্রয়োগের মাধ্যমে আগুনের এমন অতিউৎসাহী ব্যবহার ‘অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন অনুযায়ী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তার উপর এখন শীতের মৌসুম, আগুনের মাত্রা সেখানে বড়কোন ক্ষতি হতে পারতো।’ আজম সরকার ‘মানবিক কর্মকান্ড’ সহ নিজের বিভিন্ন কাজের দৃশ্যধারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক,ইউটিউবে প্রচার করে থাকেন। ফেসবুকে শাহ আজমের ১ লাখ ২৪ হাজার অনুসারী এছাড়াও আছে হাজার খানেক সাবস্ক্রাইবারের একটি ইউটিউব চ্যানেল। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একব্যক্তি জানিয়েছেন, বেলাল হোসেন নামের এক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর পুরো আয়োজনটির ভিডিও ধারণ করছিলেন। বেলাল তার ‘ভয়েস অফ বেলাল’ নামের ফেসবুক পেইজে জ্বলন্ত মোটরসাইকেলের ছবি জুড়ে দিয়ে লিখেন ‘নিজ চোখে দেখলাম আগুন নিয়ে ভিডিও করার পরিনতি, সবাই সাবধান।’ ‘থটস অফ বিল্লাল নামে এক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর গাড়িতে পানিতে ঢেলে নানা নাটকীয়তা দেখিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে’ দাবী করে এই ঘটনা প্রসঙ্গে লোকমান নামে অপর এক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নিজের ‘লোকমান স্টোরি আনফিসিয়াল’ নামের ফেসবুক পেইজে লিখেন, ‘তার অনুসারীরা এসব মিথ্যা ভিডিও বিশ্বাস করে নিজেরাই এমন কন্টেন্ট বানাতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন।আজকে আমার ছোট ভাই বেলাল, শাহ আজম ও সেলিম এমন এক ভিডিও বানাতে গিয়ে প্রাণ হারাতে বসেছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে তারা বেঁচে গেছে।’ এছাড়াও তিনি আরো লেখেন, ‘ সবাইকে অনুরোধ করবো—নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করুন। আসুন সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করি।’ প্রসঙ্গত, গত ২৮ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আল আমিন আগুন নিয়ে কন্টেন্ট বানাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন। আগুন পোহাতে পোহাতে গোসল করার ভিডিও ধারণ করতে কৃত্রিম চৌবাচ্চায় পেট্রল ঢেলে তিনি সেসময় আগুন ধরিয়েছিলেন। পেট্রলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বড় শিখা তৈরি করে আগুন, সেই আঁচে দগ্ধ হন আল আমিন। তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে জানা গেছে, পরবর্তী হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন শাহ আজম। নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষে তিনি এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জন্মদিন উদযাপনে ঘটা দূর্ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে শাহ আজমের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে আত্মস্বীকৃত মাদক কারবারি হিসেবে টেকনাফে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করা ১০২ জন কারবারির মধ্যে আজম সরকারও ছিলেন। নিজের পিতা জামাল মেম্বার সহ আত্মসমর্পণের পর দুইবছর কারাবাস শেষে মুক্তি পান শাহ আজম সরকার।