কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হচ্ছে
Monday, September 01, 2025
কক্সবাজার বিমানবন্দরে আগামী মাস থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ থেকে আন্তর্জাতিকে রূপান্তরের কাজ প্রায় সম্পন্ন। আগামী অক্টোবরে কক্সবাজার-কলকাতা রুটে উড়োজাহাজ চলাচলের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এই বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক কার্যক্রম। আগামী ২ অক্টোবর থেকে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার জন্য আইকাওকে গত ৭ আগস্ট চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
বেবিচক সূত্র জানায়, কক্সবাজার থেকে শুরুতে প্রতি সপ্তাহে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অন্য এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা এবং বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোও এই বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে গতকাল সোমবার বৈঠক করে বেবিচক। ওই বৈঠকে পুলিশ, কাস্টমস, ব্যাংক-বীমা, ইমিগ্রেশন ও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বেবিচকের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক। স্টেক হোল্ডাররা তাদের নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে দ্রুত সমাধানের কথা বলেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কক্সবাজার-কলকাতা এবং কলকাতা-কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট চালানোর প্রস্তাব দেয়। ইউএস বাংলাসহ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো এই বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা ফ্লাইট পরিচালনার কর্মপদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানায়। অচিরেই এ বিষয়ে বেবিচককে অবহিত করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা দেশের বিমান খাত ও পর্যটনশিল্পের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অর্থনীতি, হোটেল-মোটেল ব্যবসা, রিসোর্ট ও পরিবহন খাতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হলে কক্সবাজারে শুধু অবকাশযাপন নয়, আন্তর্জাতিক সম্মেলন, করপোরেট ইভেন্ট ও বৃহৎ পরিসরের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজনও সহজ হবে। এতে স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। সেদিকে জোর দিতে হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলছিল; রানওয়ে সম্প্রসারণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন এর মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মর্যাদার ফলে কক্সবাজার থেকে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এমনকি ইউরোপের নির্দিষ্ট গন্তব্যে সরাসরি যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে। বিমানবন্দরের নতুন মর্যাদার বিষয়ে সব এয়ারলাইন্স, ফ্লাইট অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবহিত করা হয়েছে। বেবিচক আশা করছে, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা বাংলাদেশের আকাশপথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দেশের পর্যটনশিল্পকে বৈশ্বিক পর্যায়ে আরও দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যাবে।
বেবিচক সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান আমাদের সময়কে বলেন, সোমবার কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে সভা হয়েছে। যেসব কাজ বাকি আছে তা ২ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ২ অক্টোবর থেকেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন ও রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে বলেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা করা সম্ভব হবে। প্রথম পর্যায়ে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করা হবে। পরে আরও ফ্লাইট যুক্ত করা হবে।