গৃহবধূ থেকে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালেই কলেজপড়ুয়া বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাডেট অফিসার জিয়াউর রহমানের বিয়ে হয়। বিএনপির প্রেস উইং ও ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত ভারত বর্ষের জলপাইগুঁড়ির নয়াবস্তির ছোট্ট শহরে বেগম জিয়ার জন্ম। নাম রাখা হয় ‘শান্তি’। পরে মেজো বোন সেলিনা ইসলাম তার নাম রাখেন ‘পুতুল’। পরবর্তী পর্যায়ে তার পরিবার দিনাজপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬০ সালে তিনি দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৬৫ সালে কলেজে ডিগ্রি কোর্সে অধ্যয়নকালে বেগম খালেদা জিয়া স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের স্বাধিকারকামী মানুষের ওপর নৃশংসরূপে ঝাঁপিয়ে পড়লে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এমনই পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রামে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ছোট্ট দুই ছেলেকে নিয়ে ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় আসেন। বড় বোন খুরশীদ জাহান হকের বাসায় ২৭ জুন পর্যন্ত দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মগোপন করে থাকেন তিনি। ২ জুলাই পাকিস্তানি সেনারা দুই ছেলেসহ তাকে বন্দী করে। দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকার পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ১৯৮১ সালের ৩১ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কিছু বিপদগামী সেনাসদস্যের হাতে শাহাদৎবরণ করেন। ততদিন অবধি সাধারণ আটপৌরে গৃহবধূই ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। শেষ অবধি দলের নেতাকর্মীদের দাবির টানে ঘরের চৌহদ্দি ডিঙিয়ে নামতে হয় তাকে রাজপথে। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। পরের বছরের মার্চে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি। ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। জিয়াউর রহমান বীর উত্তম যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন, তখন বেগম জিয়া ফার্স্ট লেডি হিসেবে তার সঙ্গী হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং নেদারল্যান্ডসের রানী জুলিয়ানাসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বন্দুকের নল উঁচিয়ে ক্ষমতা দখল করলে বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক আন্দোলনের সূচনা করেন। তিনি এরশাদের স্বৈরশাসন থেকে দেশ পুনরুদ্ধারে ১৯৮৩ সালে গঠিত সাত দলীয় জোট গঠনের স্থপতি ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে প্রহসনের নির্বাচনের বিরোধিতা করেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। যদিও আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মতো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা এরশাদের অবৈধ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন শাসনের অধীনে নির্বাচনে যোগ দিয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া এক মুহূর্তের জন্যও স্বৈরাচারের সাথে আপস করেননি। এরশাদ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নির্বিচারে ছাত্র হত্যার পথ বেছে নেয়। তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাতবার আটক করা হয় তাকে। এ সময় দেশের জনগণ তাকে ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধি দেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেগম জিয়া।